ওদের জন্য প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা


সামনের দিনগুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির। সুনির্দিষ্ট করে বললে বলতে হবে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বা আইসিটির কথা। আইসিটি কেমন করে অগ্রসর দেশগুলোকে সম্পদশালী করে তুলছে, তা দেখলেই আমরা এর সত্যতা বুঝতে পারি।
বাংলাদেশ ১৬ কোটি লোকের দেশ, যার প্রায় এক কোটি লোক প্রবাসে থেকে রেমিট্যান্স পাঠান দেশে। গেল বছর এই খাতে রেমিট্যান্স পাওয়া গেছে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। আর হোয়াটসঅ্যাপ নামের স্মার্টফোনের একটি অ্যাপ্লিকেশন বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে! শুধু হোয়াটসঅ্যাপ নয়, বিশ্বের সম্পদশালী শীর্ষ ব্যক্তিদের তালিকায় তাই সবচেয়ে বেশি তথ্যপ্রযুক্তির লোক।
কেবল সম্পদ সৃষ্টি হয়, গণমানুষের জীবন যাপনের মান উন্নয়নেও আইসিটির ভূমিকা সবাই জানে। আর এই দৌড়ে টিকে থাকার জন্য দরকার বিশ্বমানের অগুনতি প্রোগ্রামার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্রোগ্রামার তৈরির লক্ষ্য নিয়ে হাইস্কুল পর্যায় থেকে কাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াডও অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেড় দশকের বেশি সময় ধরে। তবে, বাংলাদেশে প্রোগ্রামিংয়ের চর্চা সীমিত হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ে।
হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য দেশজুড়ে বড় আকারের প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সরকারের আইসিটি বিভাগ। উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিংয়ের প্রতি আগ্রহী করে তোলা। এই আয়োজনের নাম দেওয়া হয়েছে—জাতীয় হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা (এসএইচএসপিসি)। শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের সক্ষমতা সবাইকে দেখিয়ে দিতে পারে তার জন্য এর স্লোগান হয়েছে—জানুক সবাই, দেখাও তুমি। ৮ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ে গেল এর প্রথম আঞ্চলিক আয়োজন।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ মনে করেন এই হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। তিনি আশা করেন ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা স্কুলে গণিত, বিজ্ঞানের পাশাপাশি প্রোগ্রামিংয়ের চর্চা শুরু করবে।
আটটি আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায় 
এই প্রতিযোগিতা হচ্ছে দেশের আটটি অঞ্চলে। খুলনা ও সিলেটে ১৫ মে, গোপালগঞ্জে ১৬ মে, চট্টগ্রামে ১৮ মে, রাজশাহীতে ২২ মে এবং রংপুর ও বরিশালে ২৩ মে হবে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা। সব অঞ্চলের বিজয়ীদের নিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা।
প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে কুইজ প্রতিযোগিতা। প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা চলাকালীন সময়ে কুইজে অংশগ্রহণকারীরা দেশের সেরা প্রোগ্রামার ও শিক্ষকদের কাছ থেকে নিজেদের নানান প্রশ্নের উত্তর জেনে নিতে পারছে। এ ছাড়া প্রত্যেক আঞ্চলিক উৎসবে স্থানীয় শিক্ষকদের জন্য কর্মশালারও ব্যবস্থা রয়েছে। মোবাইল ফোন সংযোগদাতা রবি এই আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক আয়োজন বাস্তবায়নে সহায়তা করছে। এ ছাড়া দেশের একমাত্র অনলাইন প্রোগ্রামিং সাইট কোডমার্শাল (www.codemarshal.org) এবং দ্বিমিক কম্পিউটিং স্কুল রয়েছে একাডেমিক সহযোগী হিসাবে।
প্রস্তুতির এখনই সময়
আরও সাতটি অঞ্চলে ভবিষ্যতে অনুষ্ঠেয় প্রতিযোগিতার রেজিস্ট্রেশন চলছে বর্তমানে। প্রতিযোগিতায় ইচ্ছুকদের সি প্রোগ্রামিং ভাষা জানা থাকতে হবে। প্রস্তুতির ব্যাপারে দ্বিমিক কম্পিউটিং স্কুলের চেয়ারম্যান তামিম শাহরিয়ার প্রতিযোগিতায় ভালো করার জন্য ইনপুট-আউটপুট, কন্ডিশনাল লজিক, লুপ, অ্যারে, ফাংশন, স্ট্রিং এই ব্যাপারগুলোতে দক্ষতা অর্জনের জন্য জোর দেন। তাঁর মতে এ জন্য প্রয়োজন প্রোগ্রামিং বই পড়া এবং সে সঙ্গে সমস্যা সমাধানের চর্চা করা। ইন্টারনেটে অনেক সাইট থেকে এই কাজ করা যায়। এ ছাড়া এ দুটি কাজই তাঁর বইয়ের ওয়েবসাইট (http://cpbook.subeen.com) থেকেও করা যাবে। উল্লেখ্য এই ওয়েবসাইটে নবীন প্রোগ্রামিং শিক্ষার্থীদের জন্য প্রোগ্রামিং সমস্যাও দেওয়া আছে, সমস্যা সমাধান করে তাৎক্ষণিক সমাধান যাচাই করারও ব্যবস্থা আছে।
অন্যদিকে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার প্রধান বিচারক এবং কোডমার্শালের সমন্বয়কারী মাহমুদুর রহমান অংশগ্রহণকারীদের সব সমস্যার সমাধান করার জন্য ব্যস্ত না হতে অনুরোধ করেছেন। তাঁর ধারণা সমস্যাগুলোর বর্ণনাটা ভালোভাবে পড়লেই একাধিক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে। মাহমুদুরের বিশ্বাস যারা আগে কখনো কোনো প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়নি তাদের পক্ষেও এখানে ভালো করা কঠিন নয়। সহজ সমাধানগুলো ঠিকমতো সমাধান করে তারপর অপেক্ষাকৃত কঠিন সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, শেষের দিকের সমস্যাগুলো অপেক্ষাকৃত কঠিন হয়ে থাকে। মাহমুদুর বললেন, এখানে পাস-ফেলের কোনো ব্যাপার নাই। যা তুমি পারো তাই তুমি করে দেখাও!
যারা অংশ নিতে চাও
দেশের ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি এবং সমমানের শিক্ষার্থীরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে। জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি এই তিন বিভাগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আইসিটি কুইজ প্রতিযোগিতা। ৩০ মিনিটের কুইজে শিক্ষার্থীদের বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। অন্যদিকে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় হচ্ছে জুনিয়র (নবম শ্রেণি পর্যন্ত) এবং সিনিয়র (দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি) এই বিভাগে। প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় দুই ঘণ্টায় ছয় থেকে আটটি প্রোগ্রামিং সমস্যার সমাধান করতে হবে। প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার বিচারকার্য সম্পন্ন হবে কোডমার্শাল সাইটে। যারা অংশ নিতে আগ্রহী তারা নিবন্ধনের বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবে www.nhspc.org এবংwww.facebook.com/nhspcbd এই ঠিকানায়।

Copyright 2011 দৈনিক সাতকানিয়া.
Blogger Template by Noct. Free Download Blogger Template