জেনে নিন, মোবাইল সিম ব্যবহারে নতুন নিয়ম


একজনের একাধিক মোবাইল নম্বর এখন জামা-কাপড়ের মতোই স্বাভাবিক। তবে এতদিন ইচ্ছেমতো সিমের মালিক হওয়া যেত। এবার তা নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে সরকার। সরকারের পরিকল্পনায় একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ চারটির বেশি সিমের মালিক হতে পারবে না।

বিটিঅারসি’র মতে একজনের একাধিক সিম থাকায় কত সিম সক্রিয় অার কতটা নিষ্ক্রিয় তা বের করা কঠিন। আবার এর মধ্যে কোনওটি নিবন্ধিত, কোনওটি নয়। যার কারণে এখনও অনেক অপরাধের আড়ালে কলকাঠি নাড়ায় মোবাইল ফোন। সেসব ঠেকাতেই এবার সিম কেনায় কঠোর হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

‘একজনের জন্য চারটির বেশি মোবাইল সিম নয়’ এমন বিষয়কে সামনে রেখে একটি নির্দেশনা জারি করতে যাচ্ছে বিটিঅারসি। তবে চূড়ান্ত নির্দেশনায় সিমের সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে। তবে সিমের সংখ্যায় যে লাগাম পরানো হচ্ছে তা অনেকটা নিশ্চিত। বিটিঅারসি এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে ‘সিম সংখ্যা নির্দিষ্ট’ করে নির্দেশনা চূড়ান্ত করবেন বলে বিটিঅারসি সূত্রে জানা গেছে।

বিটিঅারসি সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন খাঁন জানান, মোবাইল সিম বিক্রিতে ক্রেতা বা গ্রাহকের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের এনঅাইডি ডাটাবেজ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ৩ মাসের মধ্যে পরিচয়পত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু হবে। তিনি অারও জানান, এর অাগে বিটিঅারসির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের মধ্যে একটি চুক্তি হবে। পেপারওয়ার্ক চলছে। শিগগিরই চুক্তির দিন-তারিখ চূড়ান্ত হবে।

জাকির হোসেন খাঁন বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে চুক্তি হলে এনঅাইডি ডাটাবেজের লিংক ব্যবহার করতে পারবে মোবাইল ফোন অপারেটররা। ক্রেতা বা গ্রাহক সিম কিনতে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে এনঅাইডি নম্বর যাচাই করে সিম বিক্রি করা হবে। ফল অনিবন্ধিত সিম বিক্রি শূন্যের কোঠায় নেবে অাসবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল নম্বর নিবন্ধনের জন্য বিটিঅারসি সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে এ বিষয়ে বিজ্ঞাপনও প্রচার করা হচ্ছে। এ পর্ব শেষ হলে মোবাইল ব্যবহারকারীদের সিম পুনঃনিবন্ধনের জন্য অাহ্বান জানানো হবে। যাদের সব কাগজ নেই তাদের অাবারও নিবন্ধন করতে হবে। কী কী কাগজ প্রয়োজন হবে সেসব বিটিঅারসি জানিয়ে দেবে বলে জানায় ওই সূত্র।

বিটিঅারসির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কথার সূত্রে জানা গেছে, বাজারে নিবন্ধনহীন কোনও সিম নেই ! সব সিমেরই নিবন্ধন রয়েছে। সমস্যাটা পদ্ধতিগত। তার মতে, অাসলের পাশাপাশি বাজারে ভুয়া বা ভুল নিবন্ধনের সিম রয়েছে। নিবন্ধনবিহীন একটিও নেই। এসব সিম চিহ্নিত করে করে নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এনঅাইডি ডাটাবেজের সঙ্গে যাচাই করে দেখা হবে।


ওই কথার সূত্রে অারও জানা গেছে, একটি এনঅাইডি নম্বরের বিপরীতে ১ লাখ মোবাইল সিমের নিবন্ধনেরও খোঁজ পাওয়া গেছে। এ ধরনের প্রচুর সিম রয়েছে বাজারে। এনঅাইডি ডাটাবেজ ব্যবহারের সুবিধা থাকলে এসব অপকর্ম ঠেকানো যেত। মূলত একটি এনঅাইডি নম্বরের বিপরীতে কতটি সিম কেনা যাবে সেই সংখ্যা নির্দিষ্ট করতেই এই উদ্যোগ। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। তিনি যা নির্দিষ্ট করে দেবেন সেই মতেই নির্দেশনা জারি হবে।

অভিযোগ রয়েছে, বাজারে বিক্রি হওয়া ভুল বা ভুয়া নিবন্ধনের সিম দিয়েই অবৈধ ভিওঅাইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) বাণিজ্য হয়ে থাকে। এ ছাড়া একজন মোবাইলফোন ব্যবহারকারীর সিম ক্রয়ে (সংখ্যা) কোনও বাধ্যকধকতা না থাকায় এর যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। সন্ত্রাসীরাও এ সুযোগ নিয়ে একাধিক সিম ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে।

ভুয়া নিবন্ধন থাকায় একবার ব্যবহার করে সিম ফেলে দেওয়ায় তারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সিম ক্রয়ের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দিলে এবং এনঅাইডি ডাটাবেজ ব্যবহার করে সিম বিক্রি নিশ্চিত করা হলে এসব একেবারে বন্ধ হযে যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
Copyright 2011 দৈনিক সাতকানিয়া.
Blogger Template by Noct. Free Download Blogger Template